বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেকোনো কুটির শিল্পই ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তার ভিতরে বিশেষ করে তাঁত শিল্প এবং রেশম শিল্প অর্থনীতিতে অধিক ভূমিকা বিস্তার করে। কুটির শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের একটি মহৎ স্থান। আর তাঁত শিল্প হলো বাংলাদেশের বৃহত্তম কুটির শিল্প। 

বাংলাদেশের-অর্থনীতিতে-তাঁত-ও-রেশম-শিল্পের-গুরুত্ব

এ সকল শিল্প সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে বেশি বিস্তার লাভ করেছে। গ্রামে বড়লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়া থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক অর্থ আয় হচ্ছে।অন্যদিকে বাংলাদেশের রয়েছে রেশম শিল্পেরও উল্লেখযোগ্য অবদান। 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা তো রেশম শিল্পের গুরুত্ব বরাবরই অপরিসীম। কেননা একটি দেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প এবং অন্যটি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক মূল্যবান অবদান রাখে। এজন্যই এ দুটি শিল্পই বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অধিক সাহায্য করছে।তাত শিল্প এবং রেশন শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের সাথে সাথে আরো নানান রকম ভাবে এ দেশের সকল মানুষদের উপকার করে যাচ্ছে। যেমন দেখা শিল্পে শাড়ি লুঙ্গি গামছা ইত্যাদি তৈরি হতে যে সকল শ্রমিক দরকার তারা সকলেই তাঁত শিল্প ও রেশম শিল্প তৈরি হতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে।হলে এর পরিবর্তে অর্থ উপার্জন করতে পারছি। 

এই সকল ক্ষেত্রে কাজ করে বা শ্রম দিয়ে সসহজেই কোন মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। সেই সাথে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্বের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তাই বলা যায় অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তারপর রেশন শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম থাকার পরেও এর পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের জীবিকা নির্বাহ সহ বেকারত্ব কমাতেও বিপুল অবদান রাখছে এই সকল শিল্প। তাই এই উভয় শিল্পই এই দেশ ও এ জাতির জন্য উল্লেখযোগ্য ও উপকৃত বিষয়। 

তাঁত শিল্পের মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁত শিল্প একটি হস্তশিল্প।হস্তশিল্পের মাধ্যমে মূলত তার শিল্প গঠিত। হস্ত চালিত এই তাতে প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপন্ন হয়ে থাকে যা বাইরের চাহিদার প্রায় ৪০% ভাগ সম্পূর্ণ করে থাকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প কর্পোরেশন থেকে জানা যায় তাঁত শিল্প থেকে মোট বার্ষিক আয়, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হতে পরিচালিত হয় প্রতিবছর। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও বড় অংশ দেশীয় বাজারে বিক্রয় করা হয়। আর বাকি থাকা অংশ রপ্তানি বাজার থেকে আসে। 

জামদানি ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি এবং অন্যন্য হস্তশিল্পের মাধ্যমে নির্মিত কাপড়গুলো বাইরের সকল দেশে রপ্তানি করা হয়।যেমন ইউরোপ,আমেরিকা, জাপান, ভারত সহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশে এই সফল হত শিল্পের আমি তো কাপড় রপ্তানি করা হয়। কাস্টমস ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তাতভিত্তিক এই সকল পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় ২০০-৩০০ কোটি টাকা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। এ সকল বিষয়ই বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেশম শিল্পের ভূমিকা

আরো পড়ুন ঃ স্মার্ট বাংলাদেশের স্তম্ভ কয়টি ও কি কি

অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেশম শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে রেশম শিল্প এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীন অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল হয়ে উঠছে এবং রেশম শিল্প রপ্তানির মাধ্যমে দেশ ও জাতি বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করছে। রেশম শিল্প দারিদ্র বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। রেশম শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পায়। কেননা এক্ষেত্রে রেশন চাষিরাই রেশম উৎপাদন করে। তবে তারা এর থেকে বেশি অর্থাৎ এই শিল্প উৎপাদন করে এগুলো রপ্তানি করা সহ বাজারে বিভিন্ন খাতে বিক্রি করা এ সকল কিছুই করে না।

ধনী ব্যক্তিদের অর্থ কৃষকের কাছে পৌঁছায়। কেননা ধনী ব্যক্তিদের অর্থ রেশম চাষীদের কাছে স্থানান্তরিত হয় এবং এর ফলে অর্থের বৈষম্য হ্রাস ঘটে। এজন্যই বলা হয়েছে এসএম শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব।মূলত রেশমের মাধ্যমে সবথেকে খ্যাতিপূর্ণ হলো রেশম থেকে উৎপন্ন করা শাড়ি। এখন থেকে উৎপন্ন করা শাড়ির পিছনে অনেক গল্প রয়েছে। সামান্য একটি পোকার মাধ্যমে শুরু হয় রেশন তৈরির গল্প। যার প্রতিটি গল্পই রেশম তৈরীর এক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এবং সেই সকল শুরুপাত থেকেই রেশন তৈরি ও রপ্তানি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন হয়। 

বাংলাদেশের রেশমের সিল্কসিটি কোথায় 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব সব সময় অপরিসীম। তার মধ্যে রেশম হলো জাতীয় খাতে এক উল্লেখযোগ্য শিল্প। রেশম এর তৈরি প্রতিটি উৎপাদন শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা ইত্যাদি তৈরির পিছনেই অনেকগুলো ধাপ থাকে। বাংলাদেশের সিল্ক সিটি হলো রাজশাহী। এখানেই বাংলাদেশের রেশম শিল্প উৎপাদনের মেরুদন্ড। বাংলাদেশে রেশম এর জন্য সবথেকে বিখ্যাত শহর হলো রাজশাহী। রাজশাহীকে এ কারণে সিল্ক সিটি হিসেবেও ডাকা হয়। 

কেননা রাজশাহীতে রয়েছে রেশম শিল্পের ব্যাপক চাহিদা ও প্রচলন এবং রেশমি চাষেরও রয়েছে ব্যাপক প্রচলন। রেশম শিল্পের মাধ্যমে তৈরি শাড়ি, কাপড় সব সময়ই সারাদেশে প্রচলিত। তবে তার মধ্যে রাজশাহীতে সব থেকে বেশি রেশমের প্রচলন রয়েছে যে কারণে রাজশাহীতে উৎপাদিত রেশম শাড়ি বাংলাদেশ জুড়ে উল্লেখযোগ্য ও বিখ্যাত। এছাড়াও এ রেশম উন্নয়ন বোর্ড ও রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর সদর দপ্তর অর্থাৎ মেইন সেক্টর রাজশাহীতে অবস্থিত। ধরা যায় রেশম উৎপাদনের মাধ্যমে রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

রেশম শিল্প তৈরি করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি


রেশম-শিল্প-তৈরি-করার-সম্পূর্ণ-পদ্ধতি

রেশম শিল্পে অনেক উৎপাদন হয়ে থাকে। বিশেষ করে রেশন শাড়ি। এসব খালি তৈরি করার মূল কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। যেমন রেশম শাড়ি তৈরি করার পিছনের গল্প হলো শুধুমাত্র একটি পোকা। যেটা এ সম্পর্কে নামের পরিচিত।রেশম পোকার খাবার শুধুমাত্র একটাই সেটা হলো তুত গাছের পাতা। যা শুধুমাত্র রেশম পোকার খাবার নামেই পরিচিত। প্রজাপতি থেকে পোকা, পোকা থেকে গুটি, গুটি থেকে সুতা আর সুতা থেকে শাড়ি। অর্থাৎ একটি রেশম শাড়ি তৈরির পিছনে অনেক গল্পই রয়েছে। উপরে রেশম শাড়ি তৈরির যে প্রক্রিয়াটি বলা হলো সেটি যদি ভেঙ্গে বলা যায় তাহলে, প্রথমত একটি পোকা যার নাম রেশম পোকা। 

আর পোকা একটি মাত্র খাবার খেয়ে থাকে। সে যে তুত গাছের পাতা। এটি রাজশাহীতে অনেক পরিমাণে থাকে। একটি প্রজাপতি থেকে পোকা এবং সেই পোকা থেকেই সুতা তৈরীর গুটি উৎপন্ন হয়। এই গুটি গুলো থেকে কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতা বের করা হয়। গুটি গুলোকে গরম পানি দিয়ে সিদ্ধ করা হয় ফলে গুটির ভিতরে থাকা পোকা গুলো মারা যায়। আর গুটির বাইরে থাকা আবরণ এর আঠালো ভাব কমে যায়। এরপর গুটি গুলোকে অনেক সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং তারপরে গুটিগুলো আলতোভাবে ঘষে ঘষে সুতা বের করা হয়। অবশেষে সেই সুতার মাধ্যমেই তৈরি হয় একটি শাড়ি। সুতাকে প্রথম পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণ করে নরম করা হয় তারপর তা থেকে বিভিন্ন নকশা তৈরি তৈরি হয় এবং সেই বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে শাড়ি তৈরি করা হয়। সবশেষে রেশম শাড়ি তৈরির জীবনচক্র খুবই ছোট হলেও এগুলো অত্যন্ত কঠিন এবং মসৃণ কাজ। 

কিভাবে দারিদ্রতা বিমোচন হয় তাঁত শিল্পের মাধ্যমে

আরো পড়ুন ঃ সকালে যে ১০ টি খাবার খেলে ওজন বাড়ে

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্প নানা রকম ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে।সেখানে তাঁত শিল্পের মাধ্যমে গ্রামীন দারিদ্রতা দূর হচ্ছে এর সাথে দেশের দারিদ্রতাও বিমোচন হচ্ছে। এই শিল্প গ্রামীন অর্থনীতিকে অধিক শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলছে। এই শিল্পের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে সেই সাথে জাতীয় অর্থনীতিতেও উন্নতি সাধন ঘটাতে অবদান রাখছে। এই শিল্পে বিভিন্ন ধরনের কাঁচ বা সুযোগ রয়েছে। কাপড় তৈরি, কাপড় ডিজাইন এবং কাপড় কাঁটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে অনেক মানুষ কর্ম করে খেতে পারবে। 

এর ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বেশি হচ্ছে যা বাংলাদেশের গ্রামীন দারিদ্র সীমা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হচ্ছে। এই তাঁত শিল্প অনেক অদক্ষ মানুষকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। আবার এই শিল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং এই কারণে গ্রামীণ সেই সকল মানুষদের আয় বাড়ে এবং দারিদ্র বিমোচন হয়। আবার দেখা যায় অন্যান্য সকল ব্যবসা সমূহের মতো এই তাঁত শিল্পের উদ্যোগ বা ব্যবসা শুরু করতে অধিক পরিমাণ অর্থের প্রয়োজনও হয় না। স্বল্প পুঁজিতে এই উদ্যোগ বা ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়। এবং একসময় ছোট ব্যবসা থেকে লোকজনের আয় বৃদ্ধি হয়ে যায় ও এই ব্যবসা উদ্যোক্তা তৈরি করতে সক্ষম।

রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন

আরো পড়ুন ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেশম শিল্পের ভূমিকা

তাঁত শিল্পের মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরি সম্ভব। জামদানি, তাঁতের শাড়ি, গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর সহ ইত্যাদি তাঁত শিল্পে উৎপাদিত এই সকল জিনিসপত্র অধিক রপ্তানি যোগ্য পণ্য এবং ফলে এই সকল জিনিসপত্রের জাতীয় ও বিদেশি বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিদেশি অঞ্চলের কাছে আকর্ষণীয় এই সকল পণ্য ফলে, এই শিল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হয় ও এই বিষয় সমূহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলে।রপ্তানি যোগ্য এই সকল পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে তাঁতি, উদ্যোক্তা, কারিগর এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত ক্রেতা দের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। 

আমাদের এই দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে বিশেষ করে জামদানি এবং মসলিন কাপড় বেশি বিখ্যাত ও খ্যাতিমান। এবং বিশেষ করে এই জামদানি ও মসলিন এর মতো তাঁত পণ্য বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং এগুলো বাইরের দেশের সঙ্গে এদেশের একটি নতুন বাজার তৈরি করে। কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে যা দিন শেষে দারিদ্র দূর করতে সক্ষম হবে। এগুলোর একটি উদাহরণ হলো, সিরাজগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল এর তাঁত শিল্পের বেশিরভাগ পণ্য এখন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মতো রাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে এবং এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবিকা নির্বাহ করার একটি সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি হচ্ছে। 

নারীর ক্ষমতায়নে তাঁত ও রেশম শিল্পের ভূমিকা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর সাথে নারীর ক্ষমতায়নেও এই শিল্প গুলোর ভূমিকা রয়েছে ব্যাপক। তাঁ ও রেশম সিল্ক বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের একটি প্রধান শিল্প এবং এটি নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম হাতিয়ার। এই ব্যবসা বা এই শিল্প আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার দিক থেকে নারীদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রার সূচনা করেছে তাঁত এবং রেশম শিল্প এর মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ পায়। যেমন সুতো রং করা, সুতো বুনন, রেশম সিল্ক সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি। নারীরা এই সকল কাজ করতে সক্ষম হবে। তারপর তারা এই কাজের মাধ্যমে বেতন পাবে যা পরিবারের জন্য উপকারী এবং তাদের নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করে তুলব।

তাঁত এবং রেশম এমন একটি শিল্প যা ব্যাপকভাবে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তুলে তাই তাঁত ও রেশম শিল্প নারীদের জন্য একটি ভালো পেশার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।গৃহিণী নারীদের বা গৃহকর্মী নারীদের এই সকল পেশা বা কাজ করার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয় না। তাঁত ও রেশম সিল্ক বুননের কাজ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ নারীদের দ্বারা বাড়িতে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় না। তাই নারীদের জন্য রয়েছে নারীদের দ্বারা পরিচালিত নিজস্ব ছোট ইউনিট। তারা সুতা বিক্রি, ডিজাইন ও বুনন করছে। এরকম কাজের ফলে উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে যাচ্ছে এবং অনেক সময় তারা স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করছে। 

নারীর-ক্ষমতায়নে-তাঁত-ও-রেশম-শিল্পের-ভূমিকা

তাঁত ও রেশম শিল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার

তাঁত শিল্প ও রেশম শিল্পের একটি বৈশিষ্ট্য হলো স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ কাঁচামাল এবং সম্পদের ব্যবহার। এই শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে বিস্তৃতভাবে সংযুক্ত এবং সহজেই যোগ্যতা পূর্ণ। সুতা হলো তাঁত শিল্পের প্রধান কাপড়। স্থানীয় জমি ব্যবহার করে সেই জমিগুলোতে প্রচুর তুলার চাষ করা হয় এবং সেই সকল জমির কাছাকাছি অর্থাৎ যে জমিতে তুলা চাষ করা হয় তার কাছাকাছি অবস্থিত কারখানা গুলোতে সেই সকল চাষ করা সুতাই ব্যবহার করা হয়। আবার রেশম শিল্পের ক্ষেত্রে মৌলভীবাজার, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা ইত্যাদি জায়গায় রেশম পোকা পালন করে গুটি পাওয়া যায় যেখান থেকে রেশম শিল্প এর তন্তু তৈরি করা হয়। স্থানীয় কামাররা মাঝে মাঝেই তাঁত শিল্পের ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে।

যেমন তাঁতের পাওয়ার লুম নামক মেশিন যা দিয়ে তাঁত তৈরির কাজ করা হয় সেই মেশিনগুলো কামাররা তৈরি করে আবার কোন সময় মেরামত করে থাকে।এ কাজের সুফল হিসেবে যন্ত্রপাতি আমদানির ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং স্থানীয় কারিগরদের অধিক দক্ষ হতে সাহায্য করবে সেই সাথে এই সকল কারিগরদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।অনেক তাঁতি এবং ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রাকৃতিক এবং ভেষজ রঞ্জক ব্যবহার করে থাকে। যেমন গাছের ছাল ব্যবহার করে থাকে, আবার ফল, ফুল ও পাতা সহ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে যার সাহায্যে বোনা কাপড় রং করা হয়। এই যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং স্থানীয়ভাবে এটি পাওয়া যায়। সে কারণে অর্থের বেশি খরচ না হয়েই কাছাকাছি কম খরচে এ সকল উৎপাদন পণ্য পাওয়া যায়। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির উন্নতি ঘটে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব সব সময়ই ব্যাপক এ বিষয়টি আমাদের এই আলোচনায় নানা রকম ভাবে বোঝা যাচ্ছে। তাঁত এবং রেশম কাপড় ব্যাবহারের মাধ্যমে স্থানীয়দের সংস্কৃতি,জীবনযাত্রা এবং প্রকৃতির প্রকাশ ঘটে। সিরাজগঞ্জ ও টাংগাইল শাড়ির কিনারায় স্থাপিত প্যাটার্ন বা জামদানির জ্যামিতিক প্যাটার্ন আসলে স্থানীয় সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করে যেমন টাংগাইল শাড়ির সীমানা প্রাকৃতিকভাবে নকশা কৃত। এটি পণ্যের বাজার মূল্যবান করার সাথে সাথে বিশেষত্বও বৃদ্ধি করে থাকে।স্থানীয় সম্পদকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় ব্যবহার করে তাঁত এবং রেশম শিল্পকে টেকশই ও পরিবেশ বান্ধব এবং এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়া যায়। 

স্বল্প পুঁজি দিয়েই তাঁত ও রেশম শিল্পের ব্যবসা শুরু করা

তাঁত ওনরেশম ব্যবসার প্রধান শক্তি হলো স্বল্প পুঁজি দিয়েই ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্যই বলা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত ও রেশম শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। যারা দেশের বাইরে প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস করে অথবা অন্য কথায় যারা বড় বড় কারখানা বা বড় শিল্প স্থাপনে অক্ষম তারাও এই শিল্প এর মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। কেউ শুধুমাত্র তাঁত, কিছু সুতা, এবং রঞ্জক পদার্থ দিয়ে একটি ছোট শিল্পায়ন ব্যবসা শুরু করতে পারে।প্রথমত তাদের মধ্যে অনেকেই ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বাড়িতে তাঁত এর কাজ শুরু করতে পারেন। 

তাঁত ও রেশম শিল্প একটি গৃহভিত্তিক শিল্প,অর্থাৎ এই শিল্প এর মাধ্যমে বসত বাড়িতেই ছোটখাটো ব্যবসা দার করানো সম্ভব। বাড়ির এক কোণে বা এক অংশে এরকম ব্যবসার কাজ শুরু করা সম্ভব।এর ফল স্বরূপ হিসেবে ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল,পরিবহন খরচ ইত্যাদি বেশ কিছুর খরচ কমানো সম্ভব। এই ব্যবসা গুলো অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব যা দরিদ্র মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা গড়ে তোলে। এই ব্যবসার সাহায্যে একজন ব্যক্তি নিজের চাকরি তৈরি করতে পারবে এবং ধীরে ধীরে একজন বড় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। এটি এমন একটি ব্যবসার দারিদ্র কমায় এবং অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করে। 

আমাদের শেষ কথা

আমার মতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল করতে চাইলে শিল্পায়ন ব্যবসার ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশের সকল মানুষ সরকারি চাকরির আশায় না থেকে চাইলেই অল্প পুঁজি দিয়েই শিল্পায়ন ব্যবসা শুরু করে,অতঃপর ধীরে ধীরে বড় ব্যবসা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। 

আমাদের এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন বা কোনো অজানা বিষয় জানতে পাড়ার মাধ্যমে আপনার সহযোগিতা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ক্লাসিক টেক বিডি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url