গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়

আমরা বেশিরভাগ মানুষই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড সম্পর্কিত সমস্যা গুলোকে হালকা সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করি না।বর্তমান ব্যস্ত জীবনধারা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ যুক্ত অবস্থা এবং নিম্নমানের খাবার গ্রহণের কারণে সকল জনসংখ্যার মধ্যে একটি বড় অংশেরই গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারণ দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্যাস্ট্রিকের-ব্যথা-কোথায়-কোথায়-হয়

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে প্রায় মানুষ হৃদরোগ বার লিভারের সমস্যা ভেবে ভুল করে ও এই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার রোগকে আরো বেশি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয় এর ফলে আমরা এই সকল রোগের  আসল সমস্যা বা কারণ জানিনা ও ফলস্বরূপ হিসেবে উপযুক্ত চিকিৎসা পাইনা। 

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়  

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার অনুভূতি সাধারণত পেটের উপরের অংশে হয় যা চিকিৎসার পরিভাষায় এপি গ্যাস স্ট্রিক অঞ্চল নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন জায়গা তেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দেখা দেয়। তবে কোন কোন জায়গার ব্যথা একটু সাধারণ হয়ে থাকে আবার কিছু স্থানের ব্যথা একটু জটিল হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয় এই প্রশ্ন টি করলে সাধারণত এক কথায় বলা যায় পেটের উপরের অংশেই বেশি বেশি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হয়। কখনও কখনও এই ব্যথা বুকের মাঝখানে শুরু হয় বা দেখা দেয়। কারণ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বুকে হওয়ারও বেশ কিছু কারণ আছে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বুকের মাঝখানে শুরু হয়ে অতঃপর বাম বা ডান দিকে এই ব্যথার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে। এই রকম ব্যথার ফলে অস্বস্তি বোধ হয় যেমন বুক এর ব্যথা শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বালা পড়া হাওয়া আবার গ্যাস এর বুদবুদ ফেটে যাওয়া সহ এমন রকমের নানান রকম ঝামেলা বা সমস্যা হয়ে থাকে। 

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার সাধারণ লক্ষণসমূহ 

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়। এরকম প্রশ্ন তুললে এর পাশাপাশি মনে আরো অনেক প্রশ্ন জাগে।যেমনটা এখন আলোচনা করা হবে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার কিছু সাধারণ লক্ষণ সমূহ রয়েছে। যেমন উল্লেখ যোগ্য একটি সমস্যা হ্যালো পেট ফাঁপা অনুভূতি করে। কিছু ভাজাপোড়া খাবার আছে যেগুলা বাইরে দোকান বা হোটেল গুলোতে অস্বস্তি কর, পোড়া তেল এবং নষ্ট তেলে ভাজা হয়। এগুলা খেলে পেট ফাঁপা অনুভূতি হয়। পেটে ফোলা ভাব এবং অস্বস্তি এরকম লক্ষণ সমূহ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার একটি সাধারণ লক্ষণ। আবার দেখা যায় গলায় টক ফোটা বা জ্বালাপোড়া করে, মাঝে মাঝে টক ঢেকুরও উঠে থাকে।

 মূলত এই সমস্যাটি বিভিন্ন শক্ত খাবার একসঙ্গে খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। যেমন দুধ, ডিম এবং গরুর মাংসের মতো ভিন্ন ভিন্ন খাবার একই দিনে খাওয়ার কারণে পেটে এরকম জ্বালাপোড়া করে থাকে এবং গলায় টক ঢেকুর হয়ে থাকে। আবার গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার আরো একটি লক্ষণ হলো ক্ষুধা লাগলে তখন আরো বেশি ব্যথা অনুভব হওয়া। অর্থাৎ খাবার খেতে যদি একটু দেরি হয় আর তখন যদি পেটের মধ্যে ব্যথা অনুভব হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি গ্যাস জনিত লক্ষণ। আবার আরও একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হ্যালো রাত বা ঘুমের সময় যদি ব্যথার ইঙ্গিত হয় অথবা ব্যথা অনুভব হয়। উপরোক্ত এই সকল লক্ষণসমূহ শরীরে অনুভব হলে বুঝতে হবে গ্যাস জনিত সমস্যার কারণেই এমনটা হচ্ছে। 

আরো পড়ুন ঃ সকালে যে ১০ টি খাবার খেলে ওজন বাড়ে

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ও হৃদরোগ ভুল শনাক্ত করনের কারণ

এরকম অনেক মানুষ আছে যারা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা এবং হৃদরোগ এর সমস্যা গুলিয়ে ফেলে অর্থাৎ এই দুটি রোগকে এলোমেলো করে ফেলে। বুঝতে পারে না মূলত তার কোন রোগ টি বা কোন সমস্যা টি হয়েছে। গ্যাস এর ব্যথা এবং হৃদ রোগ এর প্রধান লক্ষণ বা কারণ গুলো একই। অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিক এবং হৃদরোগ হওয়ার লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। যার ফলে মানুষ এর মধ্যে বিভ্রান্তি এর তৈরি হয়। এরকম অনেক মানুষ রয়েছে অর্থাৎ বেশিরভাগ এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি জনিত কোন সমস্যার কারণে যদি বুক এর মাঝখানে জ্বালা পোড়া বা চাপ অনুভব করে তাহলে তারা ভয় পায় এবং মনে করে যে এটি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ রোগ এর কোন সমস্যা। 

তাই প্রকৃত কারণে নির্ধারণের জন্য নিজেদের মধ্যে নিজে নিজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা বা পরামর্শ নেওয়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এমনটা ছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের আরো অনেক সমস্যা রয়েছে যে কারণে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ও হৃদরোগ ভুল শনাক্ত করণ হয়। যেমন কোন সময় গ্যাস এর ব্যথার কারণে অনেক সময় নিশ্বাস নিতে বা শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,অস্বস্তি বোধ হয়, বুক ধরফর করা সহ মাথা ঘোরাও হয়ে থাকে। এই সবগুলো লক্ষণই হৃদরোগের সঙ্গে মিলে যেতে পারে কোন কোন সময়। এই সবগুলো লক্ষণ প্রায় একই রকম হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্ট হয়। এই কারণে আত্মনির্ভর বাণিজ্যের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি না সৃষ্টি করে দ্রুত একজন ডক্টর বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরামর্শ করাটাই হবে সাত থেকে ভালো সিদ্ধান্ত এবং নিরাপদ পদ্ধতি। 

গ্যাস্ট্রিকের কিছু প্রধান কারণ সমূহ 

অপ্রত্যাশিত সময়ে খাবার খেলে বা অসময়ে খাবার খেলে বেশিরভাগ সময়ে গ্যাসের সমস্যা দেখা যায়। গ্যাস্ট্রিকের অক্ষমতার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সময় মত খাবার না খাওয়া। এখনকার বেশিরভাগ মানুষই সকালের নাস্তা করে না অথবা করলেও দেরি করে নাস্তা করে। আবার অনেক দেরিতে রাতের খাবার খান। এর ফলে পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাসিড হয়। যা পেটের পাকস্থলীতে নিঃসরণ হয়।কোন কোন সময় অতিরিক্ত চা, কফি এবং কমল পানীয় পানও গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে। কারণ চা এবং কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা পাকস্থলীর এসিডের ক্ষরণকে আরো বাড়িয়ে তোলে। খালি পেটে এই খাবারগুলো গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি দ্বিগণ বেড়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় ভাবে অতিরিক্ত তেল বা মসলা এবং ফাস্ট ফুড গ্রহণ করলেও গ্যাসের সমস্যা দেখা যায়।

ধূমপান এর প্রক্রিয়ায় থাকা নিকোটিন এবং অ্যালকোহলের কারণে পেটের পাকস্থলীতে অ্যাসিড বৃদ্ধি হয় এবং ঠিক ঠাক ভাবে হজম হয় না। নিয়মিত ধূমপান করার কারণে পাকস্থালির আলসারও বৃদ্ধি হয়ে যায়। আবার উদ্বেগ এবং চাপের কারণ ও হতে পারে গ্যাস্ট্রিকের কারণ।চাপ এবং উদ্বেগ হজম শক্তি এর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস হরমোন দ্বারা তৈরি বা সৃষ্ট পাকস্থলীতে এ এ  অ্যাসিডের নিঃসরণ বৃদ্ধির কারণে আলসার হয়ে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত খাবার খেলেও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হয়। চিবানো ছাড়া খাবার গ্রহণ করলে পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং এটি হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে ফলে গ্যাস এবং বুকে জ্বালা তৈরি হয়। 

গ্যাস্ট্রিকের-কিছু-প্রধান-কারণ-সমূহ

দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক হওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব 

আমরা সবাই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যদি নিয়মিতো বা সময় মতো নিয়ন্ত্রণ না করা হয় ও বছরের পর বছর যদি এই সমস্যা ঝুলে রাখা যায় তবে গ্যাস্ট্রিক শরীরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিকর ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এই সমস্যা কেবল অস্বস্তি বা পেট ব্যথার কারণ নয় বরং পাকস্থলির অভ্যন্তরীণ গঠন এবং কার্যকারিতা পর্যন্ত নষ্ট করে দিতে পারে। যখন কোন অ্যাসিডিক পদার্থ পেটের পাকস্থালি এর ভিতরে আস্তরণে আঘাত থাকে ও তখন এটা দুর্বল হয়ে যায় সেই সাথে ভিতরের কোর্স গুলির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত ঘটে। 

এমন অবস্থা চলতেই থাকলে পাকস্থলীতে তো নানান ধরনের সমস্যা হবেই সেই সাথে পাকস্থলী পচে যাওয়ার মত মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।আবার দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে এইচ,পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তিদের অন্যান্য সুস্থ্য জনসংখ্যার তুলনায় পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার যদি খুব বেশি থাকে। এটি একটি নীরব ঘাতক যা শুরুতেই ধরা যায় না তবে ধীরে ধীরে এটি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে। তাই আমাদের উচিত দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাস জনিত সমস্যা ধুলে না রেখে এই সমস্যার সমাধান করা।তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ডক্টর এর চিকিৎসা নেয়া উচিত। 

গ্যাস্ট্রিক এবং জীবনের মান, গ্যাস্ট্রিকের মানসিক প্রভাব 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাগুলো নিয়ে গুরুত্বের সাথে চিন্তা করা হয় না। তবে দেখা যাচ্ছে যে গ্যাস্ট্রিক যদি সময় মতো প্রতিরোধ না করা হয় ও  দীর্ঘদিন এ বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়া হয় তবে এটি হতে পারে শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক দিক। গ্যাস্ট্রিক ধীরে ধীরে পেটের ভেতরের গঠন এবং অপারেশনকে ছিড়ে ফেলতে পারে। আমরা অনেকেই গ্যাস্ট্রিক কে কেবল শারীরিক একই সমস্যা হিসেবেই বুঝি।গ্যাস্ট্রিক একবার যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যায় তবে এটি মানুষের জীবনে সাধারণ জীবন যাত্রার মানকে হ্রাস করে।কর্মজীবন এবং নেতিবাচক জীবনেও গ্যাস্ট্রিকের নানান প্রভাব দেখা যায়। 

পেটের অস্বস্তিকর অনুভূতি যেমন ব্যথা বা নিয়মিত দেরি করে প্রস্রাব করা।আবার কোন কোন সময় কর্ম ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজ করার সময় যেন মনোযোগ না হারায় এজন্য মল মূত্রত্যাগের ক্ষেত্রেও দেরি করে ফেলে।শুনতে খারাপ হলেও এরকম কিছু কারণ কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার অন্যদিকে গ্যাস্ট্রিকের কারণে দেখা যায় ঘুমের ব্যাঘাত হয় আবার শরীর দুর্বল হয়ে যায়। রাতের বেলায় পেটে ব্যথার কারণে ঘুমে সমস্যা হয়। ঘুম কম হওয়ার কারণে মানুষ শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম পায় না।ক্রমাগত ঘুমের ব্যবহার বা নিয়মিত সব ঘুমে ঘাটতি থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং এর ফলে কর্ম ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। 

আরো পড়ুন ঃ স্মার্ট বাংলাদেশের স্তম্ভ কয়টি ও কি কি

গ্যাস্ট্রিক প্রতিকারে খাদ্যাভ্যাসে কেন পরিবর্তন করা প্রয়োজন 

গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য অনেক চিকিৎসা রয়েছে। বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সকল উপায় যেগুলার মাধ্যমে বা যে পরামর্শ গুলোর মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা সম্ভব। গ্যাস্ট্রিক রোগের প্রতিরোধ করতে ও চিকিৎসা নিতে সর্বপ্রথম এবং সব থেকে অত্যন্ত কার্যকরী দিক হলো খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন নিয়ে আসা। আমাদের নিয়মিত খাবারে কিছু ছোটখাটো ভুল থেকে থাকে। এবং এর ফলে কিছু সমস্যা দেখা যায় যা ওষুধের চেয়ে ভালো ভালো ফল হরণ করা সম্ভব খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে। যেমন প্রতিদিনের তুলনায় মাঝে মাঝে ছোট খাবার খাওয়া যায়। দিনে প্রতি তিন থেকে চার ঘন্টা নিয়মিতভাবে ছোট খাবার খাওয়া উচিত যেন খাবার পেটে জমে না থাকে।এর ফলে হজম ঠিকঠাক ভাবে হয় ও এর ফলে পেটের উপর চাপ কম হয় সেই সাথে গ্যাসের সম্ভাবনা কমে যায়।

আবার দিনে গরম এবং লবণ যুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দেওয়া দরকার। গরম খাবার পেটের ভেতরের দেয়ালকে আরো নষ্ট করে এবং অ্যাসিড এর বৃদ্ধি ঘটায়। তাই যতটা সম্ভব মসলাদার এবং আচার জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা সেই সাথে ভাজ খাবারগুলোও এড়িয়ে চলা দরকার। আবার কিছু অভ্যাস ও পরিবর্তন করা দরকার যেমন খাবারের পরপরই শুয়ে পড়া থেকে বিরত থাকা। খাওয়ার পর পরই যদি ঘুমানো যায় তাহলে পাকস্থলীর অ্যাসিড গলায় যায় এবং তার কারণে বুকে জ্বালাপোড়া হয়। খাওয়ার পরে সবার কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা বসে থাকা উচিত নয়। আবার আমাদের উচিত এমন খাবার খাওয়া যেন সহজেই হজম হয় অর্থাৎ এমন খাবার খাওয়া উচিত যা হজম করা কঠিন নয়।গ্যাস্ট্রিক রোগীদের হালকা খাওয়ার খাওয়া উচিত যেমন মসলাদার নয় ও সহজেই হজম হয় এমন খাবার। 

আমাদের উচিত পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সঠিকভাবে বেশি বেশি পানি পান করা। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে গ্যাস্ট্রিক কমাতে একজন ব্যক্তির তুলনার থেকে আরো বেশি পানি পান করা উচিত।এটিও ভুল ধারণা কারণ খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি পান করলে পাচক এনজাইম গুলো পাতলা হয়ে যায় হলে পাচনতন্ত্রের ক্ষতি হয়। তাই পানি বেশি খাওয়া উচিত তবে সঠিকভাবে সঠিক নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণ পান করা উচিত। বিশেষ করে খাবারের পরে বা খাবারের মধ্যে আমাদের কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি খেতে হবে। 

গ্যাস্ট্রিক-প্রতিকারের-ঘরোয়া-উপায়

গ্যাস্ট্রিক প্রতিকারে ঘরোয়া উপায় 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য রয়েছে ডক্টরের কাছে নানান রকম চিকিৎসা। মেসট্রিক প্রতিকারে  বিভিন্ন ডাক্তারের রয়েছে বিভিন্ন পরামর্শ। তবে পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক প্রতিকারের রয়েছে ঘরোয়া বিভিন্ন উপায়। গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে এবং এর সাথে এগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। যেমন পেটে গ্যাস্ট্রিস এর সমস্যা দেখা দিলে সিদ্ধ জলে মৌরি এবং আদা মিশিয়ে খেলে এর অনেকটা প্রতিকার পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি সকালে খালি পেটে বা খাবার খাওয়ার পরে খাওয়া উচিত ফলে এটি শরীরের বা পেটের অজম শক্তি বাড়ায় এবং পেটের সমস্যা দূর করে। ১ চা চামচ লেবুর রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে যদি খাওয়া যায় তাহলে পেটে এটির উপস্থিতিতে অ্যাসিড এর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। তাছাড়া পুদিনা চা বা পুদিনা পাতার রস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি পেট ঠান্ডা করে এবং হজমে সহায়তা করে। তেতুল এর পানিও গ্যাস্ট্রিক জোর করতে সক্ষম। তেতুলের রস বা ভিজিয়ে রাখা চির্তার জল পান করলে পেটের গ্যাস্ট্রিক দূর হয়। সেই সাথে কাঁচা আলুর কুচি ও এর রস পান করলে গ্যাস্ট্রিক এর ফলে বুক জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। 

আবার মসলাদার হলুদের দুধ খাওয়ার মাধ্যমেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ হলুদ মিশে সেটি পান করলে অ্যাসিডিটি কম হয়। এই প্রক্রিয়াটি গ্যাস্ট্রিক দূর করার একটি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। আবার আরো একটি প্রক্রিয়া হলো তুলসী পাতার ব্যবহার ও তুলসী পাতা চিবানো। সকালে ঘুম থেকে উঠে অল্প একটু পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নতি হয় এবং গ্যাস্ট্রিক থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আরো একটি ঘরোয়া উপায়, এক কাপ জল ফুটিয়ে তাতে এক চা চামচ জিরা মিশিয়ে গুলানোর পর মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিয়ে তারপর পান করা। এটি একটি অন্যতম কার্যকার উপায় দূর করার জন্য।আপার কলা বা পেঁপে খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক দূর হয়। কলা এবং পেঁপে হজমে বহুত উপকারী এবং পেটে অ্যাসিড এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ঠান্ডা দই অথবা ছোলার ডালের পানি গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সক্ষম। ঠান্ডা দই খেলে গ্যাস্ট্রিক এবং বুক জ্বালা কমে। খুব জ্বালা গ্যাস্ট্রিকের একটি প্রধান দিক তাই ঠান্ডা দই খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য। 

আধুনিক দৈনন্দিন জীবনে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কতটা সাধারন 

আরো পড়ুন ঃ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং এর প্রতিকার

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে বা ব্যস্ত নগর জীবনে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা খুবই সাধারণ একটি নাম হয়ে উঠেছে। এক বিংশ শতাব্দীর মানবের আধুনিক জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপের মত বিভিন্ন কারণে গ্যাস্ট্রিক রোগটি প্রায় সকল বাড়িতেই দেখা যায় বা সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। এটি কেবল মাত্র যে বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয়ে থাকে বা পেটে বুকে জ্বালাপোড়া শুধু বয়স্ক মানুষেরই যে হয়ে থাকে তা নয়। পূর্বে এই সমস্যা শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদের হলেও বর্তমানে প্রায় প্রতিটি স্কুল কলেজের ছাত্র, কোন কম বয়সী যুবক অথবা যেকোনো অফিস কর্মীদের করুণা কোন ভাবে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।এমনটা হওয়ার কারণ, আধুনিক জীবনের এই পরিস্থিতিতে মানুষ নিয়মিত খাওয়া বাদ দেয়, দ্রুত খায় কিংবা সময় এর চাপের কারণে যেকোনো কিছুই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে কর্মের দিকে দৌড় দেয়। 

এখানেই শেষ নয় অনেক ব্যক্তি চা কফি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করে। আবার ধূমপান বা ঘুমের ব্যাধি এবং শারীরিক ব্যায়ামের অভাব থাকার কারণে গ্যাস্ট্রিকের অবস্থা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় এক তৃতীয় অংশ নাগরিক কোন না কোন ধরনের গ্যাস্ট্রিক বা হজমজ্বনিত রোগে ভুগছে। গ্যাস্ট্রিক বাংলাদেশে একটি বৃষ্টি তো রোগ হয়ে গেছে। কারণ এখন বাইরে বা হোটেলে বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবার তৈরি করা হয় যেগুলা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই হাজার হাজার ব্যক্তি কে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে এবং এর কারণে নানান রকম ওষুধ খেতে হচ্ছে যেটা ওষুধের প্রতি সেই সকল মানুষদের আসক্ত করে তুলছে। 

আমাদের শেষ কথা 

আমাদের সকলের উচিত গাচ্চিক রোগ যেন না হয় এ বিষয়ে সচেতন থাকা। আমার মতে গ্যাস্টিক রোগ প্রতিরোধের জন্য আপনাদের নির্ধারিত সময়ে পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। সেই সাথে লবণ ও তেল, ভাজা খাবার সহ ফাস্টফুড জনিত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার মানসিক চাপ কমাতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে সেই সাথে শারীরিক ব্যায়ামও করতে হবে। এগুলো রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যান্ত কার্যকরী উপায়। 

আপনি যদি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন, তবে আমাদের এই পোস্ট টি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। যেন আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত মানুষরাও গ্যাস্ট্রিক জনিত রোগ থেকে বাঁচতে পারে। সবশেষে এই পোস্ট নিয়ে কোন মতামত থাকলে আপনারা পোস্টের নিচে মূল্যবান মন্তব্য করবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ক্লাসিক টেক বিডি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url